বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে শ্রম অধিকার ও পোশাক খাতে অস্থিরতা নিয়ে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব এ. এইচ. এম, সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় প্রস্তাবের পক্ষে প্রাইম ইউনিভার্সিটি এবং বিপক্ষে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন,
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করি। শ্রমিকদের বেতন বৈষম্যসহ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাকে কোনো ভাবেই গ্রহণ করি না। তবে শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবী দাওয়ার নামে বিক্ষোভ আমরা কোনো ভাবেই সমর্থন করিনা। বাহিরাগতরা দলবলসহ কারখানায় প্রবেশ করে সাধারণ শ্রমিকদের বিক্ষোভে অংশ নিতে প্ররোচিত করাকে গ্রহণ করিনা। আমরা মনে করি পোশাক শিল্পকে অস্থিতিশীল করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর। অপচেষ্টায় লিপ্ত এই সব ব্যক্তিরা। এমনকি দেখা গেছে শ্রমিক আন্দোলনের উসকানিদাতাদের কেউ কেউ পোশাক শ্রমিক নেতা কিংবা পোশাক শ্রমিকও নয়। অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ এই অস্থিতিশীলতা তৈরি করে আমাদের এই পোশাক শিল্পের বাজারকে দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাই মালিক শ্রমিক সবাই মিলে পোশাক শিল্পে অহেতুক শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করবেন বলে আশা করছি। বিগত সরকারের সময়ে সরকার শ্রমিক সংগঠনের সমর্থন আদায়ে তথাকথিত কিছু ডামি শ্রমিক সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। এসব শ্রমিক সংগঠনের নিবন্ধন যথাযথ নিয়মে হয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করা জরুরি। সম্প্রতি পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরির পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থে এসব ইয়েলো ট্রেড ইউনিয়ন কাজ করছে কিনা সেটিও অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে দেশি-বিদেশি ইন্ধন ছাড়াও শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য, কাজের অনিশ্চয়তা, কিছু কারখান। মালিকের অনুপস্থিতি, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপর্যাপ্ততাসহ নানা কারণে পোশাক শিল্পে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষের বেশি কর্মী কাজ করছে। যাদের শ্রমে ঘামে এই শিল্পটি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অনেকগুলো কারখানা গ্রীন ফ্যাক্টরি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কারখানার মালিকরা সিআইপি-ভিআইপি মর্যাদা পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হচ্ছে। নানা রকম আর্থিক। প্রণোদনা পাচ্ছে। সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করছে। রাষ্ট্রীয় সফরে দেশে বিদেশে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা যদি ন্যূনতম বেতন না পায়, শোভন কর্ম পরিবেশ না থাকে, নিরাপদ কারখানা তৈরি করা না হয়, শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হয় ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা না থাকে তাহলে কারখানা মালিকদের সিআইপি-ভিআইপি মর্যাদাসহ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ম্লান হয়ে যাবে। তাই পোশাক শিল্প মালিকদের উচিত হবে প্রত্যেক শ্রমিক, কর্মচারি-কর্মকর্তাদের নিজের সন্তানের মত ভালোবেসে পরিবারে সদস্য মনে করা। শ্রমিকদের উচিত হবে ফ্যাক্টরি মালিকদের অভিভাবক মনে করে অকারণে কারখানায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি না করা। কারণ এই খাতে বিনিয়োগ কর্মসংস্থান ও রপ্তানি
ব্যাহত হলে অর্থনীতিতে ধস নামবে। তখন মালিকও থাকবে না শ্রমিক ও থাকবে না। ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ পোশাক শিল্পে অস্থিরতার একটি বড় কারণ। পোশাক কারখানায় অব্যবহৃত কাপড় কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ বরাবর ক্ষমতাসীন দলের মাস্তানরাই করে থাকে। ক্ষমতার পালা বদলে ঝুট ব্যবসার পূর্বের নিয়ন্ত্রণকারীরা দুর্বল হয়ে পড়লে নতুন রাজনৈতিক চক্রের সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যা পোশাক শিল্পকে অস্থিতিশীল করার কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে। শ্রমিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখে পোশাক খাতের বর্তমান বিরাজমান অস্থিরতা দূরীকরণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন: ১. পোশাক কারখানা গুলোতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খতিয়ে দেখা। ২. পোশাক কারখানা গুলোতে অস্থিরতার জন্য শুধু দেশি-বিদেশি বা বহিরাগত চক্রকে দোষ না চাপিয়ে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী প্রদানসহ শ্রম আইন অনুযায়ী সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। ৩. বিগত সরকারের সময় অনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য যে সকল তথাকথিত শ্রমিক সংগঠনকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল সেই সকল সংগঠন সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতার সাথে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা। ৪. শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করা। ৫. শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে চলমান মামলাসমূহ নিস্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৬. মালিক শ্রমিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয়
সংলাপের আয়োজন করা। ৭. শ্রমিকদের সংগঠন ও ইউনিয়নের কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা। ৮. ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে শ্রম
আইনের আলোকে শ্রমিক সংগঠন করার অনুমতি প্রদান করা। ৯. কারখানাগুলোতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষার সময় শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত
বিষয়সমূহ পরিবীক্ষণ করা। ১০, শ্রমিক নেতাদের বার্ষিক সম্পদের হিসাব শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার নিময় করা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজনে "শ্রমিকের অধিকার অপেক্ষা রাজনৈতিক স্বার্থই পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি করছে" শীর্ষক প্রস্তাবে- --- বিতার্কিকদের পরাজিত করে এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক সায়েদুল ইসলাম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান, সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মীরধ্য ও ড. এস এম মোর্শেদ প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
One attachment • Scanned by Gmail