গত বছর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ কোটি ১৭ লাখ যাত্রীকে সেবা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ যাত্রীর ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে বছরে প্রায় ৫৫ হাজার ও অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৫৩ হাজার ফ্লাইট পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিক রুটে বছরে প্রায় ৯৫ লাখ এবং অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। চাহিদা অধিক থাকায় ফ্লাইটের সংখ্যা আরো বাড়বে। ২০২৩ সালে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রীর কাছে ১৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত হয়েছে। লাগেজ বহনের সুবিধার্থে বিমানবন্দরে নতুন সংযোজনের পর ট্রলির সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০টিতে দাঁড়িয়েছে। ক্যানোপি থেকে বের হয়ে বহুতল পার্কিং ও রাস্তার আগ পর্যন্ত ট্রলি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক নবচেতনাকে বলেন, ‘বিগত দিনে অত্র বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরে সম্মানিত যাত্রীবৃন্দের লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়ার অনেক অভিযোগ ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এসেছে। তা সমাধানের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে এক ঘণ্টার কম সময়ে যাত্রীদের কাছে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং লাগেজ ডেলিভারি পেতে সমস্যার সম্মুখীন হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি কর্তৃক তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন এলাকায় যাত্রীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন করে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগমনী এলাকায় দুটি এবং বহির্গমন এলাকায় তিনটি হেল্প ডেস্কে ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘণ্টা বিনা মূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, যাত্রীদের আকাশপথের যাত্রা আরও নির্ঝঞ্ঝাট করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে এই ট্রলির সংখ্যা বাড়ানো অন্যতম। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায়, বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবগুলো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ৪০টি এয়ারলাইনস এবং অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সুসমন্বয় করে সম্মানিত যাত্রীদের যাত্রা সহজতর করার কাজটি করে যাচ্ছে। পুরোনো অনেক চাহিদা এবং সমস্যার কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জবাবদিহির নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন করে নানা উদ্যোগ নেওয়ায় হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার সদস্য কর্তৃক যাত্রীদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরে কর্মরত ২৮টি ব্যাচের প্রায় ৮০০ সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্তৃক যাত্রীদের লাগেজ রেখে আসা বা লেফট বিহাইন্ড রোধে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে যেসব এয়ারলাইনসের বেশি ‘লেফট বিহাইন্ড’ সেগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের আগমনী সিটের ক্যাপাসিটি কমিয়ে এনে এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলোর সার্বিক সহযোগিতায় লাগেজ ‘লেফট বিহাইন্ড’ সমস্যায় উন্নতি করা হচ্ছে। এখন লেফট বিহাইন্ডের ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ লাগেজ যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে ১০টি ফ্রি টেলিফোন বুথ ও ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আগমনী যাত্রীদের বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিভিন্ন তথ্য সেবা অনলাইনের মাধ্যমে নিতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি সিমকার্ড না থাকায় যাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। তাই বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা যাত্রীদের ফ্রি ওয়াই–ফাই ব্যবহার করার ব্যবস্থা হয়েছে।